ঢাকা: বগুড়ায় ছাত্রীকে ধর্ষণের পর তাকে ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছে বগুড়াসহ দেশবাসী। ঘটনার পর থেকেই নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবিতে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
ঘটনার মূল হোতা বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকারের ফাঁসির দাবি তোলা হচ্ছে এসব কর্মসূচি থেকে। সেই সঙ্গে নির্যাতনের সহযোগী তুফানের স্ত্রী আশা (২০) ও তার বড় বোন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হচ্ছে।
কেননা, এই রুমকিই বিচারের নামে ধর্ষণের শিকার মেয়ে ও তার মায়ের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে। আর তুফানের স্ত্রী আশা নির্যাতন করেই থেমে যাননি ওই মা মেয়েকে যৌনকর্মী হিসেবে অপবাদ দিয়েছে।
নির্যাতিতা ছাত্রীর ভাষায়, ‘ওরা আমার ইজ্জতও কেড়ে নিলো, আবার শালিসের নামে আমার ও আমার মার মাথা ন্যাড়া করে দিলো। এর ওপর রুমকি আপা (তুফানের স্ত্রীর বোন) বলেছেন, তোদের মারলে আমার কিছু হবে না। আমি তিনটি ওয়ার্ডের কমিশনার। পুলিশকে টাকা খাওয়াইলেই মামলা ডিসমিস হয়ে যাবে।’
নারী হয়ে নারীর ওপর এমন জঘন্য নির্যাতন চালানোর জন্য রুমকি আর আশার ওপর ভয়াবহ রকম ক্ষুব্ধ নারী সমাজ। তারা দাবি তুলেছেন, যেভাবে মা মেয়ের মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে, একইভাবে রুমকি ও আশার মাথার চুলও কেটে দেয়া হোক।
বুধবার (২ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সেই দাবিই জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেত্রীরা। ছাত্রীকে ধর্ষণের পর মা মেয়ের মাথা ন্যাড়া করার জন্য শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান তারা।
একই সঙ্গে ধর্ষিত তরুণীর ওপর তুফানের স্বজনরা যে নির্যাতন চালিয়েছিলেন, তাদেরও একই শাস্তি দেয়ার দাবি জানান। মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রুমকি ও তুফান সরকারকে রিমান্ডে নেয়া লোক দেখানো মাত্র।
মহিলা দলের সভানেত্রী সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনি যদি সত্যিকার অর্থে তাদের রিমান্ডে নিয়ে থাকেন, তাহলে রুমকী, তার মা ও শাশুড়ির চুল ন্যাড়া করে দেবেন। দেশের নারীদের পক্ষ থেকে এটাই আমাদের দাবি।’
একই সময়ে বগুড়াতেও এমন দাবি জানিয়ে ঝাড়ু মিছিল করেছেন নেত্রীরা। তারা ছাত্রী ধর্ষণ ও মা মেয়েকে মাথা ন্যাড়া করে নির্যাতন চালানোর মূল হোতা শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারসহ তার সহযোগীদের ফাঁসির দাবি করেছেন।
বগুড়া শহরের নবাববাড়ি সড়ক থেকে ঝাড়ু মিছিল বের করা হয়। পরে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা শহর প্রদক্ষিণ করে। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আগত নারীরা ঝাড়ু, জুতা হাতে বিক্ষোভ করে। বগুড়া জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি এ বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
এ ছাড়া অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ-মিছিল অব্যাহত রয়েছে। নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ধর্ষক তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা সরকার, স্ত্রীর বোন কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকসহ সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার বাড়ি থেকে ক্যাডার দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। ঘটনা ধামাচাপা দিতে দলীয় ক্যাডার এবং এক নারী কাউন্সিলরকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেছনে লেলিয়ে দেন।
এরপর ২৮ জুলাই বিকেলে তারা ওই ছাত্রী ও তার মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে চার ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালান। এরপর দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে ২৮ জুলাই রাতেই তুফান ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুদিন পর ৩০ জুলাই ঢাকার সাভার ও পাবনা শহর থেকে তুফানের স্ত্রী আশা সরকার, কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার ওরফে রুমকি, তার মা রুমি বেগম, তুফানের দুই সহযোগী জিতু ও মুন্নাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া রাত আটটার দিকে বগুড়া শহরের বাদুড়তলায় নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তারের বাবা জামিলুর রহমানকে।
গোনিউজ/এন